নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৭:৫৯ পিএম, ০৬ মে, ২০২১
টানা ১২ বছরের বেশি সময় ধরে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় এসেছে। তবে সাম্প্রতিক সময়ে নানামুখী সংকট বাড়ছে আওয়ামী লীগ সরকারের। একটি সংকট চলে গেলে আরেকটি সংকট নতুন করে আসছে। তবে সাম্প্রতিক সময়ে একাধিক সংকট সরকারের জন্য দুর্ভাবনার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। আর এই সংকটগুলো থেকে উত্তরণ না করতে পারলে সরকারের প্রতি জনগণের যে আস্থা সেই আস্থায় ফাটল ধরতে পারে বলে অনেকে মনে করছে। আর যে বিষয়গুলো নিয়ে সরকার এখন দুর্ভাবনায় পড়ছে তার মধ্যে রয়েছে,
১. টিকা সংকট: গতকাল থেকে বাংলাদেশে করোনার টিকা নিবন্ধন বন্ধ করা হয়েছে। টিকার সংকট এখন দৃশ্যমান হয়েছে এবং বিভিন্ন মন্ত্রী বিভিন্ন রকম কথাবার্তা বললেও শেষ পর্যন্ত টিকা কবে আসবে এবং নতুন করে করোনার টিকা কর্মসূচি চালু করা যাবে কিনা সে নিয়ে সরকারের মধ্যে দুশ্চিন্তার রেখা ক্রমশ বড় হচ্ছে। কারণ সরকার চাইলেই আগামীকাল টিকা আনতে পারবে এমন বাস্তবতা নেই। টিকা আমদানিটা একটা দীর্ঘ প্রক্রিয়ার ব্যাপার এবং সেই প্রক্রিয়ায় বাংলাদেশ কবে কিভাবে আবার টিকা পাবে এ নিয়ে অনিশ্চয়তা রয়েছে। এ নিয়ে জনমনে নানা রকম প্রশ্ন উঠেছে।
২. ভারতের করোনা পরিস্থিতি: সরকারের জন্য দ্বিতীয় উদ্বেগের বিষয় দাঁড়িয়েছে ভারতের করোনা পরিস্থিতি। ভারতে যেভাবে করোনা সংক্রমণ বাড়ছে এই ঢেউ যে কোনো সময়ে বাংলাদেশে আছরে পড়তে পারে। বাংলাদেশে যদি ভারতের অর্ধেক পরিস্থিতি তৈরি হয় তাহলে সেটা সরকারের জন্য সামাল দেওয়া খুব কঠিন হবে। এরকম একটা বিপর্যয়কর পরিস্থিতি বাংলাদেশে যেন না হয় সেটি সকলে কামনা করে। এটি নিয়ে সরকারের মধ্যে দুর্ভাবনা ক্রমশ বাড়ছে।
৩. হেফাজত, ছাত্র অধিকার, উগ্র মৌলবাদ: সরকারের আরেকটি ভাবনার বিষয় দাঁড়িয়েছে হেফাজত, ছাত্র অধিকার এবং অন্যান্য উগ্রবাদীদের তৎপরতা। সরকার হেফাজতকে সফলের সঙ্গে দমন করেছে। কিন্তু হেফাজত একেবারে মিলিয়ে যাবে বা হেফাজতকে পুরোপুরি দমন করা হয়েছে এমনটি সরকার মনে করে না। বরং সরকারের ভাবনার বিষয় এটি যেকোন সময় হেফাজত নতুনরূপে আসতে পারে এবং সেটি সরকারের জন্য একটি বড় ধরনের চাপ হবে। হেফাজত এবং ছাত্র অধিকার সরকারের জন্য একটি ভাবনার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।
৪. খালেদার বিদেশযাত্রার অনুমতি: মানবিক কারণে হয়তো শেষ পর্যন্ত বেগম খালেদা জিয়াকে বিদেশ যাওয়ার অনুমতি দেয়া হচ্ছে। কিন্তু এই অনুমতির ক্রিয়া প্রতিক্রিয়া নিয়ে সরকার ভাবিত এবং চিন্তিত। সরকার যদি অনুমতি না দিতো তাহলে এর দায়-দায়িত্ব সরকারের ওপর আসতো যে সরকার একজন মুমূর্ষু রোগীকে চিকিৎসার জন্য বিদেশ যাওয়ার অনুমতি দেয়নি। আবার খালেদা জিয়ার বিদেশে যেয়ে যে রূপ পাল্টে ফেলবে এটি সরকার ভালো মতই জানে এবং তখন সরকার পরিস্থিতিকে মোকাবেলা করবে সেটি নিয়ে সরকারের মধ্যে এক ধরনের ভাবনা রয়েছে।
৫. সরকারের ভেতর সমন্বয়হীনতা: ক্রমশ সরকারের ভেতরে সমন্বয়হীনতা দেখা যাচ্ছে। এক মন্ত্রণালয় আরেক মন্ত্রণালয়ের কাজের ব্যাপারে কথা বলছে। টিকা নিয়ে একেক মন্ত্রী একেক রকম কথা বলছেন। সকালে একরকম বলছেন আবার বিকেলে এক রকম বলছেন। আর এই সমন্বয়হীনতা সরকারের জন্য একটা ভাবনার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। কে কোন কাজটা করবে তার সুনির্দিষ্টকরণ নেই। বরং কাজ নিয়ে এক ধরনের দায়িত্বহীনতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। সবাই যার মতো করে সমস্যা সমাধানের জন্য পরামর্শ দিচ্ছেন। কাজের কাজটা কেউ করছেন না। সরকারের ভেতরে এই সমন্বয়হীনতা সরকারকে এক নতুন ভাবনায় ফেলেছে।
এই দুর্ভাবনাগুলো থেকে উত্তরণের মাধ্যমে সরকারকে সফল হতে হবে এবং সে উত্তরণের পথটি নিয়ে কি হবে সেটিই সরকারের চিন্তার বিষয়।
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
৭ জানুয়ারি নির্বাচনের পর আওয়ামী লীগ সরকার একটা স্বস্তিদায়ক অবস্থায় ছিল রাজনৈতিক দিক থেকে। রাজনৈতিকভাবে যারা নির্বাচন বর্জনের ডাক দিয়েছিল, নির্বাচন প্রতিহত করতে বলেছিল তারা ব্যর্থ হয়েছে। নির্বাচনের পর তারা সঙ্কুচিত, কোণঠাসা এবং হতাশাগ্রস্ত। আওয়ামী লীগের সামনে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ নেই বললেই চলে। না সংসদে, না রাজপথে।
বিএনপি এখন হতাশাগ্রস্ত একটি রাজনৈতিক দল। তাদের ভিতর অবিশ্বাস-কোন্দল প্রচণ্ড আকার ধারণ করেছে। যার ফলে দলটি এখন নতুন আন্দোলনের কর্মসূচি নিয়ে সরকারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর মতো অবস্থায় নেই। অন্য রাজনৈতিক দলগুলো অস্তিত্বের সংকটে আছে। তাদের কর্মী সমর্থক নেই। কাজেই রাজনীতিতে তারা সরকারের বিরুদ্ধে তেমন কোন প্রভাব বিস্তারের সুযোগই পাচ্ছে না।
আন্তর্জাতিকভাবে নির্বাচনের আগে মনে করা হয়েছিল সরকার বড় ধরনের সংকটে পড়বে। বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলো নির্বাচনের আগে যেভাবে সরকারকে সতর্ক করেছিল, হুঁশিয়ারি দিয়েছিল; অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ নির্বাচন না হলে নিষেধাজ্ঞার মত ব্যবস্থা গ্রহণের হুমকি দিয়েছিল- নির্বাচনের পর সেই অবস্থা পাল্টে গেছে।
বিভিন্ন দেশ বাংলাদেশের নির্বাচনকে ত্রুটিপূর্ণ বলা সত্ত্বেও নতুন সরকারের সাথে সম্পর্ক এগিয়ে নেওয়ার বিষয়টিকে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিয়েছে। বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এখন বাংলাদেশের সাথে সম্পর্ক এগিয়ে নেওয়ার জন্যই বেশি চেষ্টা করছে। অন্যান্য দেশগুলো যেমন- ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাজ্য; তারাও বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ককে এখন গুরুত্ব দিচ্ছে। বর্তমানে নির্বাচনের বিষয় তারা তেমন সামনে আনতে রাজি নন। এরকম একটি পরিস্থিতিতে সরকারের জন্য একটি স্বস্তিদায়ক অবস্থায় থাকার কথা।
কিন্তু বাস্তবতা হল সরকার স্বস্তিতে নেই। বরং আস্তে আস্তে সরকারের উপর চাপ বাড়ছে। আর সরকারের এই চাপের প্রধান কারণ হল অর্থনীতি। বিগত মেয়াদেই অর্থনীতিতে বিবর্ণ চেহারাটা সামনে উঠেছিল। এটি আস্তে আস্তে ক্রমশ চ্যালেঞ্জিং হয়ে যাচ্ছে এবং সরকারের জন্য অর্থনৈতিক সংকটগুলো মোকাবেলা করা অত্যন্ত দুরূহ হয়ে পড়ছে বলেই অর্থনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন।
অর্থনৈতিক সংকট মোকাবেলার জন্য সরকার বেশ কিছু দৃশ্যমান উদ্যোগ গ্রহণ করছে। কিন্তু সেই উদ্যোগগুলো নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। যেমন অর্থনৈতিক সংকটের একটি প্রধান বিষয় হল মুদ্রাস্ফীতি। মুদ্রাস্ফীতি বেড়েই চলেছে, মুদ্রাস্ফীতি কমানোর জন্য সরকার যত ব্যবস্থাই নেক, সেই ব্যবস্থাগুলো এখন পর্যন্ত ফলপ্রসূ বলে বিবেচিত হয়নি।
অর্থনৈতিক সঙ্কটের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক ছিল, ব্যাংকিং ব্যবস্থাপনায় অনিয়ম-বিশৃঙ্খলতা। আর এটি দূর করার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক একীভূতকরণের একটি উদ্যোগ গ্রহণ করে। দুর্বল ব্যাংকগুলোকে সবল ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। সেই সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কয়েকটি ব্যাংক একীভূত হয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংকের এই কৌশল এখন ব্যাপক সমালোচিত হচ্ছে। এর ফলে ব্যাংকিং সেক্টরে বিশৃঙ্খল অবস্থারও একটা উন্নতি হয়নি।
ব্যাংকিং সেক্টরের বিশৃঙ্খলার হওয়ার প্রধান কারণ হল খেলাপি ঋণ এবং অর্থপাচার। ঋণ খেলাপিদের আইনের আওতায় আনতে কঠোর অবস্থান গ্রহণের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে বিভিন্ন পরিকল্পনার কথা শোনা যাচ্ছে বটে। কিন্তু বাস্তবে এই পরিকল্পনাগুলো কতটুকু বাস্তবায়িত হবে সে নিয়েও বিভিন্ন মহলের সন্দেহ রয়েছে। কারণ অতীতেও দেখা যে, ঋণ খেলাপিদের বিরুদ্ধে সরকার কঠোর হতে পারছে না।
বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের সঙ্কট বাড়ছে, বিশেষ করে এখন বাংলাদেশকে ঋণের দায় মেটাতে হচ্ছে। ঋণের দায় মেটানোর চাপ সামলাতে গিয়ে বৈদেশিক মুদ্রায় টান পড়ছে। আর বৈদেশিক মুদ্রার প্রধান যে উৎস প্রবাসী আয় এবং রপ্তানী আয়- সে দুটোতেও কোনওরকম ইতিবাচক ব্যবস্থা নেই। সামনে বাজেট, আর এই বাজেটে অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের একটি মহাপরিকল্পনা সরকারকে করতেই হবে। অর্থনৈতিক সংকট যদি সরকার নিয়ন্ত্রণ না করতে পারে, তাহলে সরকারের জন্য সামনের দিনগুলো আরও কঠিন, চ্যালেঞ্জিং এবং সংকটাপন্ন হবে বলেই মনে করে অর্থনৈতিক বিশ্লেষকরা।
অর্থনীতি হাসান মাহমুদ আলী আয়শা খান আওয়ামী লীগ সরকার
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
৭ জানুয়ারি নির্বাচনের পর আওয়ামী লীগ সরকার একটা স্বস্তিদায়ক অবস্থায় ছিল রাজনৈতিক দিক থেকে। রাজনৈতিকভাবে যারা নির্বাচন বর্জনের ডাক দিয়েছিল, নির্বাচন প্রতিহত করতে বলেছিল তারা ব্যর্থ হয়েছে। নির্বাচনের পর তারা সঙ্কুচিত, কোণঠাসা এবং হতাশাগ্রস্ত। আওয়ামী লীগের সামনে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ নেই বললেই চলে। না সংসদে, না রাজপথে।